ভাড়া বাসায় দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় ছোট্ট দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে রিকশা চালাতেন সোহাগ মিয়া। কিন্তু ভাড়া নেওয়া রিকশার আয় দিয়ে সেভাবে সংসার চলে না। সেই রিকশাচালককে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক ব্যক্তি। তিনি সোহাগ মিয়ার চাহিদা অনুযায়ী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কেনার অর্থসহায়তা করেছেন।
সেই টাকা দিয়ে মঙ্গলবার সোহাগ মিয়াকে একটি রিকশা কিনে দেওয়া হয়েছে। রিকশা পেয়ে সোহাগ মিয়া বলেছেন, ‘এহন দুই বাচ্চা লইয়্যা খাইয়্যা-পইর্যা থাকতে পারমু। ওগো ল্যাহাপড়া করাইতে পারমু। যে আমারে এই উপকার করছে, আল্লায় হ্যার ভালো করুক, মন খুইল্লা দোয়া করি। ২ আগস্ট সোহাগ মিয়ার দুর্দশা নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ‘বটতলায় থেমে থাকা রিকশায় এক বাবার জীবনসংগ্রামের ছবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কপ্রবাসী এক ব্যক্তি সোহাগ মিয়াকে সহায়তা করার জন্য যোগাযোগ করেন। এরপর তিনি সহায়তার অর্থ পাঠালে সোহাগ মিয়ার চাহিদা অনুযায়ী একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দেওয়া হয়। সোহাগ মিয়ার দুই সন্তান। ছেলে রমজানের বয়স সাড়ে ছয় বছর আর মেয়ে জান্নাতের বয়স চার বছর। ওদের মা নেই। তাই দুই সন্তানকে কোলে ও পাদানিতে বসিয়ে প্রতিদিন রিকশা চালান সোহাগ মিয়া। থাকেন নগরের জিয়া সড়ক এলাকার একটি খুপরিতে। পরিবারে আর কেউ নেই, যাঁর কাছে শিশুসন্তানদের রেখে জীবিকার জন্য বাইরে বের হবেন। বাধ্য হয়ে ছোট্ট দুই শিশুকে নিয়ে এভাবে প্রতিদিন রাস্তায় নামেন তিনি। জীবিকার তাগিদে এক যুগ আগে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে বরিশালে আসেন সোহাগ মিয়া। দুই ভাই ও এক বোন। বাবার ১ শতাংশ বাড়ির জমি আছে। মা-বাবার মৃত্যুর পর ওইটুকু জমিতে ঘর তুলে মাথা গোঁজার মতো অবস্থা না থাকায় বড় ভাই আবুল হোসেন ঢাকায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ নেন। বোন পুতুলের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় স্বামীর সংসারে আছেন। আর সোহাগ বরিশালে চলে আসেন। আট বছর আগে বিয়ে করেন সোহাগ মিয়া। এরপর রিকশা চালিয়ে তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। একে একে দুই সন্তান আসে সংসারে। সম্প্রতি তাঁদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। প্রায় তিন মাস আগে স্ত্রী দুই সন্তানকে রেখে সোহাগকে তালাক দিয়ে অন্যত্র চলে যান। একদিকে সংসার ভাঙার কষ্ট, অন্যদিকে ছোট্ট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিপদে পড়েন সোহাগ। ঘরে বসে থাকলে জীবন চলবে না। ছোট বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে বাধ্য হয়ে পথে নামেন, রিকশার হ্যান্ডল ধরেন শক্ত হাতে। কোলে ছোট্ট জান্নাতি, পাদানিতে ছেলে রমজান পাদানি আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। সকালে রান্নাবান্না করে বাচ্চাদের খাওয়ান ও নিজে খান। তারপর রাস্তায় নামেন। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। এর মধ্যে রিকশার ভাড়া ৩০০ টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে বাজারসদাই ও বাসাভাড়া দিয়ে জীবনটাকে জিইয়ে রাখেন। মঙ্গলবার রিকশা পাওয়ার পর তিনি বিকেল পর্যন্ত ৫৯০ টাকা আয় করেছেন। রিকশা পাওয়ার খুশিতে বললেন, ‘এহন একটা গতি অইছে। যা আয় অইবে, বেইয়্যা নিজেরই থাকপে। মালিকের ভাড়া গোনা লাগবে না। এহন বাচ্চা দুইডারে বড় করমু, পড়াশোনা করামু।